,

অনুমোদনের অপেক্ষায় ২৫টির বেশি প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: যে কোনো দিন ঘোষণা হতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। তাই আগেভাগেই উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

এজন্য রোববার অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্র্বাহী কমিটির (একনেক) বিশেষ বৈঠক।

এটিকে ‘নির্বাচনী একনেক বৈঠকও’ বলছেন কেউ কেউ। সাধারণত সপ্তাহের মঙ্গলবার নিয়মিত এ বৈঠকটি হয়। তবে এবার মাঝপথেই বসতে যাচ্ছে।

এটিকে সরকারের এ মেয়াদের শেষ বৈঠক হিসেবেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন থাকা সব প্রকল্পই অনুমোদন দেয়ার চেষ্টা চলছে।

এ ক্ষেত্রে ৩৫টি প্রকল্পের খসড়া তালিকা জমা দেয়া হলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৫টি প্রকল্প চূড়ান্ত করতে সম্মতি (টিক চিহ্ন) দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তবে শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। কাজের চাপে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনও অফিস করবেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বুধবার বলেন, চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। নির্বাচনের বছরে সাধারণত প্রবৃদ্ধির হার কমে যায়।

কিন্তু এবার যাতে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য আমরা অনেক প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছি। আগামীতে যে সরকারই দায়িত্ব পাক তাদের জন্য সুবিধা হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ঠিক থাকবে।

এর আগে মঙ্গলবার একনেক বৈঠক শেষে মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রোববার একনেক বৈঠক হবে। এর মাঝে এক মঙ্গলবার নিয়মিত বৈঠক হয়নি বলেই বাড়তি এ বৈঠক করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এটিই হয়তো এ সরকারের শেষ একনেক বৈঠক হতে পারে। এরপর প্রধানমন্ত্রী চাইলে একনেক হবে না চাইলে হবে না।

ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এ প্রকল্পগুলো কোন অর্থনৈতিক যুক্তিতে নেয়া হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। কেননা প্রকল্পগুলো অনুমোদনের যৌক্তিকতা থাকলেও এগুলো বাস্তবায়ন পর্যায় আছে কিনা, অর্থায়ন কিভাবে হবে, কেনাকাটার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা হবে কিনা- এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে শুধু অনুমোদন দিলে তো কোনো লাভ হবে না। বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সেই দেরিই হবে। প্রবৃদ্ধিতে দ্রুত অবদান রাখবে কিভাবে?

কয়েক মাস ধরেই চলছে প্রকল্প অনুমোদনের মহোৎসব। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয় সর্বোচ্চ ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্প। এ

গুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৭৪০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৯ হাজার ৩৬১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০৬ কোটি চার লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাঁচ হাজার ৭২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

রোববারের বৈঠকে তোলা হতে পারে এমন একটি প্রকল্প হচ্ছে শেখ হাসিনা নকশিপল্লী, জামালপুর (প্রথম পর্যায়)। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৮৯৩ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উন্নত পরিবেশে নকশি উদ্যোক্তা, হস্তশিল্পী, কুটির শিল্পী ও তাঁত শিল্পীদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।

উৎপাদিত পণ্যের মান বৃদ্ধির জন্য সার্ভিস ও ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন এবং নকশি শিল্পী ও তাঁতিদের দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্প। তা বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৮৩৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

অনুমোদন পেলে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

প্রকল্পের আওতায় একাডেমিক ভবন, ইন্সটিটিউট ভবন, আবাসিক হল, আবাসিক ভবন, ফরেন স্টুডেন্ট ডরমেটরি নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হবে।

পশ্চাৎপদ কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলার দারিদ্র্য হ্রাসকরণে নেয়া হচ্ছে আরেক প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

২০২১ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়া।

প্রকল্পের আওতায় হতদরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা উন্নয়ন, সম্পদ হস্তান্তর ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে হতদরিদ্র্য মানুষের আয় বৃদ্ধি করা এবং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

ঢাকায় ‘আজিমপুর সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পও উঠছে একনেকে।

এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে এক হাজার ৯২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদফতর।

শুধু নতুন প্রকল্পই নয়, উপস্থাপন হচ্ছে সংশোধন প্রস্তাবও। ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির উৎপাদন পদ্ধতি ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রূপান্তরকরণ প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৬৬৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

সেখান থেকে ২২৩ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে এখন প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ৩৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর